করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অনেকে অক্সিজেনভর্তি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে রাখছেন।
সংক্রমিত হলে কাজে আসবে ভেবেই এমনটা করছেন তাঁরা। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু অক্সিজেন কীভাবে দিতে হবে, তা না জেনে এটি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। অক্সিজেন অকারণে ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
একজন সুস্থ–সবল মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। করোনায় সংক্রমিত রোগীদের কারও কারও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তখন তার অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার জন্য পালস অক্সিমিটার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রে পরিমাপের পর যদি দেখা যায় অক্সিজেনের মাত্রা কম, তাহলে কাছের কোনো হাসপাতালে যেতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিছুতেই নিজে নিজে অক্সিজেন নেওয়া যাবে না। কারণ, একেক রোগীর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা ও প্রয়োগপদ্ধতি একেক রকম হতে পারে।
বাতাসে প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে। সেই অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস আমরা প্রতিমুহূর্তে নিশ্বাসের সঙ্গে নিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে একটি অনুপাত মেনে প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয়। কাজেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্সিজেন নিলে তা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এতে খিঁচুনি হতে পারে, চোখ জ্বালাপোড়া, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি, কাশি বা বুকে ব্যথা, এমনকি শ্বসনব্যবস্থারও ক্ষতি হতে পারে। পেশির স্পন্দন সংকোচন-প্রসারণ অস্বাভাবিক হতে পারে।
যাঁদের ইতিমধ্যেই শ্বাসতন্ত্রের অন্য কোনো রোগ রয়েছে, যেমন সিওপিডি বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, তাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এমনিতেই কম থাকে। এর সঙ্গে তাঁরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েন। এসব রোগী যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কৃত্রিমভাবে বাড়তি অক্সিজেন নেন, তাহলে তাঁদের ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। মস্তিষ্কের রেসপিরেটরি ড্রাইভ নষ্ট হয়ে ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখলে বড় অগ্নিকাণ্ডেরও ঝুঁকি রয়েছে। অবশ্য সিলিন্ডারের মুখ শক্ত করে বন্ধ থাকলে বিপদের ঝুঁকি অনেকটাই কম। কিন্তু অনেক সময় কোনো না কোনোভাবে তা লিক হতে পারে; কোনো কারণে পাইপটা খোলা থেকে যেতে পারে। ব্যবহারের পর পাইপ বন্ধ করতে ভুলে যেতে পারেন অনেকে। এতে বড় বিপদ হতে পারে। কারণ অক্সিজেনের উপস্থিতিতে যেকোনো বস্তুই দাহ্য হয়ে ওঠে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি